রাত ২টা। ঢাকার গলিপথে ঘুরে বেড়ানো সাংবাদিক রুদ্র হঠাৎ থেমে যায় পুরনো একটি দালানের সামনে। দেয়ালে লেখা—”এই বাড়ির দ্বিতীয় দরজা খোলা নিষেধ।” অদ্ভুত ব্যাপার হলো, বাড়িটায় মোটামুটি একটা প্রধান দরজা ছাড়া আর কোনো দৃশ্যমান দরজা নেই। কিন্তু লেখা স্পষ্ট: *“দ্বিতীয় দরজা খোলা নিষেধ”।*
রুদ্র শহরের পুরাতন স্থাপনার ওপর লেখালেখি করে। কৌতূহল থামাতে না পেরে সে গেট পেরিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ে। চারদিকে ধুলো, জংধরা লোহা, আর দেওয়ালের মধ্যে পুরনো রাজকীয় কারুকাজ। তবে মেঝের এক কোণে দেখা গেল চৌকো একটি কাঠের টুকরো, জানলার মতো কিন্তু মাটি বরাবর লাগানো—দেখতে যেন ঠিক দরজার মতো, তবে নিচু।
রুদ্র সেটাকে স্পর্শ করতেই এক মুহূর্তে চারপাশ বদলে যায়। বাতাস ভারি হয়ে ওঠে, আলো নিভে যায়, আর একটা গন্ধ ভেসে আসে—পুরনো ঘামে ভেজা কাগজের মত। সে ঘাবড়ে গেলেও সাহস করে সেই দ্বিতীয় দরজাটাই খুলে ফেলে।
দ্বিতীয় দরজার ওপারে ছিল একটা সরু সিঁড়ি, নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে অন্ধকারে। রুদ্র নিচে নামতেই চারপাশে শোনা যায় কানে ফিসফিসানি—“সে আবার এসেছে… সময় বদলাবে…”
নিচে একটি ছোট ঘর, ঘরের মাঝখানে পড়ে আছে পুরনো এক টাইপরাইটার। পাশে কাগজে লেখা—“লেখো, আর ফিরে পাবে যা হারিয়েছো।”
রুদ্র মুগ্ধ হয়ে পড়ল। কাগজে প্রথম লাইন লিখলো: *“আমি আমার মৃত ভাইকে ফিরে পেতে চাই।”*
টাইপরাইটার আপনা আপনি চলতে থাকে। লেখা হয়: *“চোখ বন্ধ করো। ফিরে তাকিও না।”*
রুদ্র চোখ বন্ধ করে। হঠাৎ সে শুনতে পায় কারো গলা—“দাদা?”
চমকে উঠে পেছনে তাকায়—সত্যিই, তার ছোট ভাই রাজু, যে ছয় বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিল, এখন তার সামনে দাঁড়িয়ে। ঠিক সেই বয়সের, ঠিক সেই পোশাকে।
কিন্তু রাজুর চোখ দুটো নিস্তেজ, ঠোঁটে এক অদ্ভুত হাসি। সে ধীরে ধীরে বলে, “তুই দ্বিতীয় দরজা খুলেছিস। এখন তোর জায়গায় আমাকে থাকতে হবে।”
রুদ্র দৌড়ে ফিরে আসতে চায়, কিন্তু দেখল দরজাটা এখন ইট দিয়ে আটকানো, আর ওপরে টাইপরাইটারে লেখা হচ্ছে—*“প্রত্যাবর্তন অসম্ভব।”*
এরপর সে যেন অচেতন হয়ে পড়ে। চোখ খুলে দেখে সে এখন টাইপরাইটারের পাশে বসে আছে। কাগজে লেখা: *“রুদ্র দাশ, ৩২ বছর বয়স, নিখোঁজ—২২ অক্টোবর, ২০২৫”*
কিন্তু তার হাত চলছে। সে লিখে যাচ্ছে গল্প, বাস্তব আর ভয় মিশিয়ে। ঘড়ি থেমে আছে ২:13-এ।
এরপর থেকে, রাত ২টা নাগাদ কেউ যদি ওই বাড়ির সামনে দিয়ে যায়, শুনতে পায় টাইপরাইটারের শব্দ, আর দেয়ালের লেখা বদলে গিয়ে বলে—
*“তৃতীয় দরজাটাই শেষ আশ্রয়…”*
শেষ।