ফুটবল মাঠের মাপ: ইতিহাস জানলে আপনি অবাক হবেন!
ফুটবল খেলার মাঠ—যেখানে হাজারো স্বপ্ন তৈরি হয়, ভাঙে, আর সৃষ্টি হয় ইতিহাস। কিন্তু আপনি কি জানেন, এই মাঠের মাপ আজ যেমন দেখা যায়, তা সবসময় এমন ছিল না? ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে, ফুটবল মাঠের আকৃতি ও পরিমাপ একসময় ছিল অগোছালো, আর সেই অগোছালোতাই একসময় সৃষ্টি করেছিল বিভ্রান্তি ও বিতর্ক।
শুরুর দিনগুলো ছিল ‘মাঠে যার যার মতো’
১৮ শতকের শেষ দিকে ইংল্যান্ডে যখন আধুনিক ফুটবলের জন্ম হয়, তখন নির্দিষ্ট কোনো মাঠের মাপ ছিল না। একেকটি ক্লাব তাদের ইচ্ছামতো মাঠ বানাতো—কখনও ছোট, কখনও অসমান, কখনও আবার বাঁকানো মাঠ! এমনকি গোলপোস্টের উচ্চতা পর্যন্ত একেক জায়গায় ভিন্ন ছিল।
১৮৬৩: প্রথম একক উদ্যোগ
ফুটবলের নিয়ম নির্ধারণে দ্য ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (FA) ১৮৬৩ সালে প্রথমবারের মতো মাঠের প্রস্থ এবং দৈর্ঘ্য নির্ধারণের চেষ্টা করে। কিন্তু তখনও তা বাধ্যতামূলক ছিল না। নিয়মে বলা হয়েছিল, মাঠ হতে পারে সর্বোচ্চ ২০০ গজ (১৮২ মিটার) দীর্ঘ এবং ১০০ গজ (৯১ মিটার) প্রস্থ।
ফিফার আগমন ও মান統ন
১৯০৪ সালে ফিফা গঠনের পর বিষয়টি একটু পরিপাটি হতে শুরু করে। ১৯৩৭ সালে ফিফা মাঠের কেন্দ্র থেকে ৯.১৫ মিটার দূরে একটি “ডি” আকৃতির বৃত্ত যুক্ত করে, যেটা আজকের “পেনাল্টি আর্ক” নামে পরিচিত। এছাড়া, ফিফা মাঠের দৈর্ঘ্য ১০০-১১০ মিটার এবং প্রস্থ ৬৪-৭৫ মিটারের মধ্যে রাখার নিয়ম করে।
বিশ্বকাপ মাঠে একরকম, ক্লাব ম্যাচে আরেক!
আপনি কি জানেন, বিশ্বকাপ বা আন্তর্জাতিক ম্যাচের জন্য মাঠের মাপ ফিক্সড—১০৫ মিটার x ৬৮ মিটার। কিন্তু ক্লাব ফুটবলে, বিশেষ করে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে, কিছু স্টেডিয়ামে মাঠ একটু ছোট বা বড় হতে পারে, যতক্ষণ না ফিফার সীমার মধ্যে থাকে।
বিষ্ময়কর তথ্য: অলিম্পিক মাঠে ফুটবল?
১৯০০ সালের অলিম্পিকে ফুটবল খেলা হয়েছিল এমন একটি মাঠে, যেটি মূলত ছিল অ্যাথলেটিক ট্র্যাক! সেদিন খেলোয়াড়দের গোলপোস্টের মাঝামাঝি গর্ত ছিল, যার ফলে গোলরক্ষক বারবার পড়ে যাচ্ছিলেন। এ ঘটনা পরবর্তীতে নিয়ম করার প্রয়োজনীয়তা জোরদার করে।
শেষ কথা
আজ আমরা যে নিখুঁত ফুটবল মাঠ দেখি, তার পেছনে রয়েছে শত বছরের বিবর্তন। নিয়ম, বিতর্ক আর সময়ের পরীক্ষায় আজকের এই মাপ দাঁড়িয়েছে। আর এখানেই ফুটবল শুধু খেলা নয়—এ এক বিজ্ঞান, এক ইতিহাস, এক চলমান রূপান্তর!