ছায়াপথের প্রহেলিকা!

রাত দশটা। ঢাকার উপকণ্ঠে অবস্থিত পুরনো এক গ্রাম—ধূসরচৌকি। গ্রামের এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা শতবর্ষী জোড়াবাড়ি নিয়ে বহু কাহিনী ঘোরে। কেউ বলে সেখানে নাকি এক অভিশপ্ত চিত্রকর বাস করতেন, যিনি তাঁর আঁকা ছবির মধ্যেই হারিয়ে গিয়েছিলেন।

তানিয়া, একজন চিত্রশিল্পী ও শহরের আর্ট কলেজের প্রভাষক, পুরনো ঐতিহ্যবাহী ঘরবাড়ি নিয়ে গবেষণার কাজে ওই জোড়াবাড়িতে যান। তিনি ছবি তুলছেন, খাতায় নোট নিচ্ছেন। হঠাৎ একটি পুরনো ক্যানভাস নজরে আসে—ধূলিমাখা, তবে স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে: এক যুবতীর প্রতিকৃতি। চোখে এক অদ্ভুত শূন্যতা।

রাত বাড়ে, গ্রাম নিস্তব্ধ। তানিয়া ছবির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে যেন এক ঝাপটায় চোখ বন্ধ করে ফেলে। যখন চোখ খোলে, দেখেন তিনি আর ছবির সামনে নেই—বরং নিজেকে দেখতে পান একটি অপরিচিত ঘরের আয়নায়। বাইরে বৃষ্টির শব্দ, মোমবাতির আলোয় দেখা যাচ্ছে দেয়ালে সেই একই যুবতীর ছবি।

তানিয়া ভয় পেয়ে যায়। দরজার কাছে গিয়ে শুনতে পান কেউ ফিসফিস করছে—“তুমি এসে গেছো অবশেষে… আমায় সম্পূর্ণ করো…”

তানিয়া টের পান, তিনি এক পরিত্যক্ত গল্পের ভেতরে আটকে গিয়েছেন। একটি অসমাপ্ত আত্মার আকুতি যেন তাঁকে টানছে, যেন সেই যুবতীর প্রতিকৃতি সম্পূর্ণ করতে হবে তাঁকেই।

পরদিন সকালে গ্রামের লোকজন এসে দেখে, জোড়াবাড়ির ঘরে কেউ নেই। শুধু দেয়ালে একটি নতুন আঁকা ক্যানভাস ঝুলছে—যুবতীর মুখে শান্তির ছায়া, পাশে তানিয়ার স্বাক্ষর। আর ঘরের মেঝেতে পড়ে আছে তানিয়ার রঙতুলি, যেন সেখানেই সে মিলিয়ে গেছে।

সেই দিন থেকে জোড়াবাড়ির নাম পাল্টে গ্রামের লোকেরা ডাকে—ছায়াপথ। আর রাতে যারা ওই পথ দিয়ে যায়, মাঝেমধ্যে শুনতে পায় রঙ মেশানোর শব্দ…

শেষ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *