অদৃশ্য অতিথি: কুয়াশার রাতের রহস্য!

শীতের কুয়াশাচ্ছন্ন রাতে, ছোট্ট এক গ্রাম—আলোরপাড়া। চারদিক নিস্তব্ধ, যেন প্রকৃতিও থমকে গেছে। এমন এক রাতে গ্রামের প্রখ্যাত বৃদ্ধ লেখক অরবিন্দ বাবুর বাড়িতে ঘটলো এক অদ্ভুত ঘটনা।

অরবিন্দ বাবু একা থাকেন তাঁর পুরনো দোতলা বাড়িতে। বয়সের ভারে ন্যুব্জ, তবুও প্রতি রাতে ঠিক ৯টা নাগাদ তিনি চা খেতে খেতে একটি পুরনো রেকর্ড প্লেয়ার চালান। সেদিনও তিনি তেমন করছিলেন, হঠাৎ দরজায় টোকা পড়ল।

অরবিন্দ বাবু অবাক—এই রাতে কে আসবে? দরজা খুলে দেখেন, একজন লম্বা, কালো কোট পরা মানুষ দাঁড়িয়ে। মুখটা অস্পষ্ট, কুয়াশার চাদরে ঢাকা। লোকটি বলল, “আমি আপনার পুরনো এক গল্পের চরিত্র। আপনি আমাকে তৈরি করেছিলেন, আবার ভুলেও গিয়েছেন। আজ আমি ফিরেছি, কারণ আপনি আমার কাহিনী অসম্পূর্ণ রেখেছিলেন।”

অরবিন্দ বাবু হতবাক। “তুমি কী বলছো?”
লোকটি বলল, “আপনি ১৯৮৪ সালে একটি রহস্য গল্প লিখছিলেন—‘ছায়া মানুষের ডায়েরি’। মাঝখানে থেমে গিয়েছিলেন। আপনি জানেন না, সেই অসম্পূর্ণতায় আমি আটকে গিয়েছি। আজ আমার মুক্তি চাই।”

অরবিন্দ বাবু আতঙ্কে কাঁপছেন, মুখ দিয়ে কথা বেরোচ্ছে না। হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকাল, অন্ধকার নেমে আসে পুরো ঘরে। যখন আলো ফেরে, লোকটি নিখোঁজ।

পরদিন সকালে, প্রতিবেশী একজন গিয়ে দেখে অরবিন্দ বাবুর দরজা খোলা, রেকর্ড প্লেয়ারটা ঘুরছে, কিন্তু অরবিন্দ বাবু নেই। শুধু টেবিলের ওপর পড়ে আছে পুরনো একটি ডায়েরি—গল্পটি যেখানে থেমে ছিল, ঠিক সেখান থেকে নতুন কয়েকটি পৃষ্ঠা লেখা। লেখার কালি এখনও ভেজা। নিচে সই করা—“ছায়া মানুষ”।

গ্রামের মানুষ বলছে, তিনি কি নিজেই মিশে গেছেন নিজের সৃষ্ট চরিত্রে? নাকি সত্যিই তাঁর সৃষ্টি তাঁকে এসে নিয়ে গেছে?

এখনো প্রতি বছর, সেই দিন রাতে, অরবিন্দ বাবুর বাড়ি থেকে অদ্ভুত এক গান শোনা যায়… যেন কেউ অপেক্ষা করছে শেষ অধ্যায়ের।

শেষ।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *